স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সেনাসদস্য কারাগারে


স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সেনাসদস্য কারাগারে

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খলিশাকান্দি গ্রামে স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সেনাসদস্য শাহাদাত হোসেন কাজল (২৭) কে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন নিহত সাদিয়া (২২)-র মা রাবেয়া সুলতানা। 

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) শাজাহানপুর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পরে আদালতে সোপর্দ করা শাহাদাতকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খলিশাকান্দি দহপাড়ার টিনশেড ঘর থেকে সাদিয়া, তার তিন বছর বয়সী মেয়ে সাইফা ও সাত মাসের ছেলে সাইফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুই শিশুকে গলা কাটা অবস্থায় এবং সাদিয়ার গলায় ওড়না পেঁচানো দাগ দেখা যায়। ঘটনার পর এলাকায় শোকের পাশাপাশি আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনার দিনই শাহাদাতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তিনি ময়মনসিংহ সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন এবং কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন।

মামলার এজাহারে রাবেয়া সুলতানা উল্লেখ করেছেন, গত তিন বছর ধরে শাহাদাত তার মেয়ের ওপর নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। জমি বিক্রির টাকা আনা ও মোটরসাইকেল কেনার জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করতেন। ঘটনার আগের দিনও তিনি ফোন করে টাকা দাবি ও সাদিয়াকে মারধরের হুমকি দেন।

রাবেয়া দাবি করেছেন, ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুরের আগে শাহাদাত ও অজ্ঞাত সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই শিশুকে হত্যা করে এবং সাদিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করার পর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত মরদেহের পাশে একটি রক্তবিহীন লোহার বটি দেখেন, যা পরিকল্পিত হত্যার প্রমাণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে শাহাদাতের পরিবারের দাবি, সাদিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তারা বলছেন, সাদিয়া দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। তবে নিহত সাদিয়ার পরিবার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে একসঙ্গে তিনটি মরদেহ দেখে সবাই হতবাক হন। আশপাশে কোনো শব্দ না পাওয়ায় ঘটনাটি আরও রহস্যজনক মনে হয়েছে।

ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, “হত্যা নাকি আত্মহত্যা- এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

ময়নাতদন্ত শেষে সাদিয়ার মরদেহ ভান্ডারপাইকা গ্রামে এবং দুই শিশুর মরদেহ খলিশাকান্দিতে দাফন করা হয়েছে। নৃশংস এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×