গাজা যুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখের বেশি: জার্মান গবেষণা


গাজা যুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখের বেশি: জার্মান গবেষণা

গাজায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত এক নতুন বিশ্লেষণ জানাচ্ছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এতদিন যা অনুমান করা হয়েছিল তার তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘জাইট’ জানায়, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা অনুমান করেছেন, গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত এক লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন বা মারা গেছেন।

রস্টকে অবস্থিত এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান গণনা করে জানায়, যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে মৃতের সংখ্যা ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ এর মধ্যে হতে পারে। তাদের মধ্যম হিসাব দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৯ জনে।

গবেষণা প্রকল্পের সহ-নেতা ইরেনা চেন বলেন, ‘আমরা কখনোই প্রকৃত সংখ্যাটা জানব না। আমরা শুধু সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পরিসরটি নির্ণয় করার চেষ্টা করছি।’

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের গবেষকেরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি তথ্যের পাশাপাশি স্বতন্ত্র গৃহস্থালি জরিপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংক্রান্ত রিপোর্টসহ বিভিন্ন উৎসের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

সরকারি হিসেবে এতদিন কেবল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করেছে, যেখানে যুদ্ধের দুই বছরে মৃত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। তবে ‘জাইট’ বলছে, এই সংখ্যায় কারচুপির প্রমাণ মেলেনি। বরং স্বতন্ত্র গবেষণাগুলো ইঙ্গিত করছে, মন্ত্রণালয়ের তথ্য সাধারণত সংযত থাকে এবং বাস্তবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। একাধিক গবেষণায় ধারাবাহিকভাবে উচ্চ মৃত্যুহারের তথ্য পাওয়া গেছে, যা সরকারি হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মূলত হাসপাতালের মৃত্যু সনদের ভিত্তিতে নিশ্চিত মৃত্যুকেই গণনায় রাখে। কিন্তু অনেক হাসপাতাল কার্যত অচল থাকায় এখন তারা স্বজনদের জমা দেওয়া মৃত্যুসংক্রান্ত নোটিফিকেশনও যাচাই করে হিসাবের অংশ করছে। ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যেসব মানুষ মারা গেছেন, তাদের অনেককেই এখনো তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এই সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনায় নিয়ে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক গবেষকেরা লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক মৃত্যুহারের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাদের প্রাক্কলন অনুযায়ী, নিহতদের প্রায় ২৭ শতাংশই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং প্রায় ২৪ শতাংশ নারী। সরকারি তথ্য বয়স ও লিঙ্গভেদে পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় এই বিশ্লেষণকে আরও নির্ভরযোগ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গবেষকেরা যুদ্ধ গাজার মানুষের গড় আয়ুতে কী প্রভাব ফেলছে তাও পরিমাপ করেছেন। যুদ্ধের আগে নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৭ বছর, পুরুষদের ৭৪। তাদের হিসাব বলছে, ২০২৪ সালে এই গড় আয়ু নারীদের ক্ষেত্রে ৪৬ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৬ বছরে নেমে যেতে পারে। এটি পরিসংখ্যানগত পূর্বাভাস, ধরে নেওয়া হচ্ছে যুদ্ধ একইভাবে চলতে থাকলে বাস্তবে পরিস্থিতি এমন হতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদনের মতে, এই পরিসংখ্যানই পরিষ্কারভাবে দেখায়; গাজার সাধারণ মানুষের জীবনে যুদ্ধ কতটা গভীর এবং ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×