ইতালিতে নারী হত্যার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আইন পাস


ইতালিতে নারী হত্যার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আইন পাস

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল ইতালির পার্লামেন্ট। দেশটিতে প্রথমবারের মতো ‘ফেমিসাইড’–কে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারী হওয়ার কারণে বিদ্বেষমূলক হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাস করা হয়েছে—যেখানে শাস্তি ধরা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সর্বসম্মত ভোটে আইনটি পাস হয়। এর মাধ্যমে ইতালি বিশ্বের সেই অল্পসংখ্যক দেশের তালিকায় যুক্ত হলো, যারা নারী হত্যাকে আলাদা অপরাধ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

ফেমিসাইড নিয়ে আইন প্রণয়নের দাবি ইতালিতে দীর্ঘদিনের। তবে ২০২২ সালে জিউলিয়া চেকেত্তিন হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয় এবং নতুন আইনের দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। ২২ বছর বয়সী জিউলিয়াকে তার সাবেক প্রেমিক ফিলিপ্পো তুরেত্তা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ঘটনার পর কয়েকদিন ধরেই তুরেত্তা পলাতক ছিল, এবং সেই সময় হত্যাকাণ্ডটি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পায়।

জিউলিয়ার বোন এলেনা আলোচিত মন্তব্যে বলেছিলেন, খুনি কোনো দানব নয়; বরং পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বেড়ে ওঠা একটি ‘হৃষ্টপুষ্ট সন্তান’। তার এই বক্তব্যই দেশজুড়ে হাজারো মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে আনে, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহত্তর পরিবর্তনের দাবি তোলে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। সরকার থেকে শুরু করে বিরোধী দল—সব পক্ষই আইনটির প্রতি সমর্থন জানায়। অনেক এমপি নারীর প্রতি সহিংসতার শিকারদের স্মরণে লাল ফিতা বা লাল জ্যাকেট পরে অধিবেশনে অংশ নেন। নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো নারীকে তার ‘লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে’ হত্যা করা হলে সেটিকে ফেমিসাইড হিসেবে গণ্য করা হবে।

এই আইনের খসড়া তৈরি করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিশন, যারা সম্প্রতি ২১১টি নারী হত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে। কমিশনের সদস্য বিচারক পাওলা দা নিকোলা বলেন, প্রচণ্ড প্রেম বা ঈর্ষাকে হত্যার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করাকে ভুল ধারণা বলে মনে করতে হবে। তার ভাষায়, “এই আইন প্রণয়ণের অর্থ দাঁড়াবে যে আমরাই ইউরোপে প্রথম অপরাধীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য চিহ্নিত করেছি। আর তা হলো ক্ষমতা ও আধিপত্য।”

এর আগে সাইপ্রাস, মাল্টা ও ক্রোয়েশিয়া তাদের দণ্ডবিধিতে ফেমিসাইডের আইনি সংজ্ঞা যুক্ত করেছে।

সূত্র: বিবিসি

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×