চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’: বিবিসি সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৪:৪৭ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হবার পর প্রথমবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত প্রাণঘাতী সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) প্রকাশিত বিবিসির ইমেইল সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, “আমার অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’ সাজানো এক ‘প্রহসন’।”
আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষ তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড চাওয়ার আবেদন করেছে। তবে হাসিনার দাবি, শুরু থেকেই এই বিচার প্রক্রিয়া “পূর্বনির্ধারিত দোষী সাব্যস্ত রায়ের” দিকে এগোচ্ছিল।
রায় ঘোষণার আগেই রাজধানীর ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এই রায় শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহতদের পরিবারগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় হাসিনা ও তার সরকারের পরিকল্পিত সহিংসতায় ১,৪০০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।
দেশত্যাগের আগে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার ব্যক্তিগত নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, এমন অভিযোগ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “আমি অস্বীকার করছি না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, কিংবা অপ্রয়োজনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ আমি কখনও দিইনি।”
এই বছরের শুরুতে ফাঁস হওয়া একটি টেলিফোন আলাপের অডিও যাচাই করে বিবিসি আইতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে “প্রাণঘাতী অস্ত্র” ব্যবহারের অনুমোদনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আদালতে সেই অডিও বাজানো হয়েছে।
জুলাই মাসে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ কামালের জন্য মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। অন্যদিকে, আবদুল্লাহ আল-মামুন জুলাইয়ে তার ভূমিকার জন্য দোষ স্বীকার করলেও তাকে এখনও সাজা দেওয়া হয়নি।
বিচার প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, তিনি নিজের দিক তুলে ধরার সুযোগ পাননি বা নিজের আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিহ্ন করতে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।”
সোমবার তার পক্ষে থাকা আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘে জরুরি আপিল দাখিল করেছেন।
আগামী ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ওপর আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে।
বিবিসি হাসিনাকে তার ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন করেছেন, যা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলায় বিচারাধীন। হাসিনা সেই মামলাতেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ক্ষমতাচ্যুত করার পর বাংলাদেশে গোপন কারাগারের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে বহু বছর ধরে বন্দিদের কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই আটক রাখা হতো। অপহৃত বা এসব কারাগারে আটক থাকা হাসিনার সমালোচক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের অবৈধভাবে হত্যা করার অভিযোগও রয়েছে। হাসিনা জানান, এসব বিষয়ে তিনি জানতেন না।
নেতৃত্বে থাকাকালীন সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগও তিনি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করছি। তবে কোনো কর্মকর্তার অপব্যবহারের প্রমাণ থাকলে তা যেন নিরপেক্ষ ও বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হয়।”
শেখ হাসিনা এবং তার সাবেক সরকারের আরও জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগেও পৃথক আদালতে বিচার চলছে, যা তারা অস্বীকার করছেন।