ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা রোধে রেলওয়ের ১৪ দফা সতর্কতা নির্দেশ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০১:৪৯ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
শীতের কুয়াশা ঘন হতে শুরু করায় দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচলে বাড়তি ঝুঁকি দেখা দিতে পারে—এমন আশঙ্কায় বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। কুয়াশার কারণে সিগন্যাল, লেভেল ক্রসিং গেইট কিংবা রেললাইনে কোনো প্রতিবন্ধকতা স্পষ্টভাবে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য মোট ১৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের ডেপুটি চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (পশ্চিম) মোসা. আরফিন নাহারের স্বাক্ষরে সম্প্রতি পাঠানো এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা জানানো হয়। চিঠিটি বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক পাকশী ও লালমনিরহাটের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, নির্দেশনা অনুসরণে গাফিলতি ঘটলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, যা জানমাল ও রেলওয়ের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে রাতের শিফটে কর্মরত স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেকশনাল টিআই/জেটিআই, এসএসএই (এলআই/সিগ), এবং কন্ট্রোল অফিসে কর্মরত সিটিএনএল, ডিটিএনএল ও টিএনএলদের সর্বক্ষণ সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
ঘন কুয়াশায় জিআর–৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ এবং এসআর–২৯, ৩১, ৩২, ৩সহ সংশ্লিষ্ট সব উপবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
কুয়াশায় নিরাপদ ট্রেন চলাচলে রেলওয়ের ১৪ দফা নির্দেশনা
১. নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি সেকশনের কুয়াশার পরিস্থিতি টিএনএলদের জানতে হবে। কুয়াশা থাকলে স্টেশন মাস্টারের মাধ্যমে লোকোমাস্টারকে সতর্কতাসহ কশন অর্ডার (ওপিটি–৮০) দেওয়া হবে।
২. স্টেশন মাস্টাররা কুয়াশাচ্ছন্ন সেকশনে লেভেল ক্রসিং গেইট থাকলে তা উল্লেখ করে কশন অর্ডার ইস্যু করবেন।
৩. কোনো স্টেশন কুয়াশায় ঢেকে গেলে সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টার পাশের দুটি স্টেশনকে কশন অর্ডার ইস্যুর জন্য জানানোর পাশাপাশি কন্ট্রোল অফিসকে অবহিত করবেন।
৪. বিধি অনুযায়ী কুয়াশায় ফগ সিগন্যাল ব্যবহার করতে হবে। স্টেশন সীমার মধ্যে লেভেল ক্রসিং থাকলে গেইটকিপারকে সতর্ক করে সড়কপথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ আছে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. লোকোমাস্টার ও গার্ডকে লেভেল ক্রসিং অতিক্রমের সময় বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। এ বিষয়ে অরিজিনেটিং স্টেশন ও লোকোসেড থেকে বুক অর্ডারের মাধ্যমে নির্দেশনা দিতে হবে।
৬. রাতের ট্রেনের ক্ষেত্রে ছাড়ার আগে এলএম ও গার্ডের মোবাইল নম্বর কন্ট্রোল চার্টে নথিভুক্ত করতে হবে। ক্রসিং স্টেশনের আগেই টিএনএল ও ডিটিএনএল তাদের অবহিত করবেন।
৭. নিশ্চিত করতে হবে, লাইন ক্লিয়ার দেওয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র স্টেশন মাস্টারই পালন করছেন।
৮. স্টেশন মাস্টার কেবল পাশের স্টেশন মাস্টারের সঙ্গেই লাইন ক্লিয়ার আদান–প্রদান করবেন।
৯. টেইল বোর্ড বা ল্যাম্পসহ ট্রেনের অবস্থান গার্ড প্রত্যয়ন না করলে ইনরিপোর্ট দেওয়া যাবে না।
১০. নন–ইন্টারলকড স্টেশনে দুটি ট্রেনের ক্রসিংয়ের সময় বিধি অনুযায়ী প্রথম ট্রেন গ্রহণের লাইনের ফেসিং পয়েন্ট ট্রেনের পক্ষে সেট করতে হবে এবং বিপরীত প্রান্তের ট্রেইলিং পয়েন্ট রিভার্স রাখতে হবে।
১১. বিরতিহীন স্টেশনে ক্রসিংয়ের ক্ষেত্রে উভয় ট্রেনকে আউটার সিগন্যালে ডেড স্টপ করানো হবে এবং ট্রেনের গুরুত্ব বিবেচনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য বোর্ড কন্ট্রোলারের নির্দেশনা মানতে হবে।
১২. শীতকালে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের নিয়মিত নৈশ সংকেত পরিদর্শন পরিচালনা করতে হবে।
১৩. দীর্ঘসময় কুয়াশা থাকলে মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় কন্ট্রোল অফিসে জরুরি সেল চালু করতে হবে এবং সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।
১৪. স্টেশনে পর্যাপ্ত ফগ সিগন্যাল মজুত রাখতে হবে এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
শেষে চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘন কুয়াশায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন চলাচল বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কঠোরভাবে নিরাপত্তা বিধি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করতে হবে।