একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকের কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:০৯ এম, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
চরম আর্থিক সংকটে থাকা পাঁচ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নতুন মোড় নিয়েছে। মার্জারের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা এই ব্যাংকগুলোর কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা খাতটিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক এখন ‘সাম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে যাচ্ছে। আর্থিক অনিয়ম ও তারল্য সংকটে জর্জরিত এসব ব্যাংকের পুনর্গঠনের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।
২৬ নভেম্বর বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঁচ ব্যাংকের প্রশাসকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেতন–ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সেখানে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সহায়তা হিসেবে ১,০০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন করে ৩৫০ কোটি টাকা, যা শুধুমাত্র সীমিত পরিশোধে ব্যবহার করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার কর্মীকে নিয়ে গঠিত এই পাঁচ ব্যাংকে সিদ্ধান্তটি খুব দ্রুতই কার্যকর হতে পারে বলে একজন প্রশাসক জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজোলিউশন বিভাগও বেতন–ভাতা কমানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছে।
কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায়। ইউনিয়ন ব্যাংকের এক কর্মী অভিযোগ করেন, “বেতন অ্যাকাউন্টে জমা হলেও সেটি সময়মতো উত্তোলন করা যায় না।” তিনি আরও জানান, ব্যাংকের সংকট গভীর হওয়ায় তারা তীব্র আর্থিক চাপে আছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, পাঁচ ব্যাংকই আমানতকারীদের অর্থ ব্যবহার করে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম।
সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ক্ষতির চিত্র ভয়াবহ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটি ৪,৩০৮ কোটি টাকা নেগেটিভ অপারেটিং ইনকাম দেখায়। একই সময় বেতন–ভাতা বাবদ খরচ হয়েছে ৬৫২ কোটি টাকা, যা পরিশোধ হয়েছে আমানতকারীদের অর্থ থেকে। ব্যাংকটির বার্ষিক নিট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৫,৪৫০ কোটি টাকা। আগস্টের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এর গুরুতর প্রশাসনিক দুর্বলতাও উঠে আসে।
এ মাসের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে পাঁচ সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংককে একীভূত করে ‘সাম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের প্রাথমিক অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন পর্যন্ত এসব ব্যাংককে মোট ৩৫,৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা কোনো ব্যাংকই এখনও ফেরত দিতে পারেনি।