ব্যাংক খাতের লুকানো সব সংকট সামনে আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:৩৫ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
অর্থনীতির দীর্ঘদিনের জমে থাকা দুর্বলতাগুলো একে একে সামনে এসে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি মনে করেন, গোপন খেলাপি ঋণ, প্রভিশনের ঘাটতি এবং পুঁজির সংকট মিলিয়ে ব্যাংক খাত এখন স্পষ্ট দুরবস্থার মুখে দাঁড়িয়ে গেছে। বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে, নীতিগত স্বচ্ছতা কম এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সামগ্রিক অর্থনীতি চাপে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২৭ নভেম্বর সকাল ১১টায় রাজধানীর পল্টনের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের মিলনায়তনে ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা’ বিষয়ক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন গোপনে রাখা খেলাপি ঋণের পাহাড়, প্রভিশনের ঘাটতি ও তারল্য সংকট এখন প্রকাশ্য বাস্তবতা। এসব উদাহরণ টেনে তিনি নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা না থাকা এবং সংস্কার বিলম্বিত হওয়ার সমালোচনা করেন। তার মতে, এই দুর্বলতাগুলো সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির সামনে দাঁড় করিয়েছে। একই সঙ্গে তার অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণার তাড়াহুড়ো ও নীতিগত অস্পষ্টতা বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দুর্বল করছে। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক প্রবাহকে আটকে দিচ্ছে এবং সংস্কার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আনার চেষ্টা শুধু স্বপ্ন দেখার মতো।
সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন
কীভাবে এসব চিহ্নিত সমস্যার সমাধান করা হবে সে ব্যাপারে সরকারের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করা, প্রশাসক নিয়োগ বা কিছু নিয়ম আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বাইরে সুশাসন নিশ্চিত করতে আর কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা পরিষ্কার নয়।
বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশকে অত্যন্ত দুর্বল হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বহু বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে নিচে। সুদের হারসহ নীতিগত নির্দেশনাও স্পষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বন্দর ব্যবস্থাপনা ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মন্তব্য
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণা নিয়ে তাড়াহুড়োর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, কোনো সংস্কার ছাড়া মাত্র ১৩ দিনে বড় অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগের ঘোষণা বাস্তবসম্মত নয়। তার মতে, নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের আড়ালে নেওয়া এমন সিদ্ধান্ত স্বচ্ছতার ঘাটতি তৈরি করে। অংশীজনের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা ছাড়া বড় সিদ্ধান্ত টেকে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আগের সরকারের সময়ে হওয়া বৈষম্যমূলক চুক্তিগুলোর স্বচ্ছতা না থাকায় মানুষের সন্দেহ আরও বেড়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নীতিনির্ধারণ নিয়ে পর্যবেক্ষণ
পলিসি রেট কমানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পদক্ষেপ ঠিক ছিল, তবে এই সংকোচনমূলক নীতি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমিয়েছে। তার মতে, এখন স্থিতিশীলতা থেকে প্রবৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় হলেও জ্বালানি, গ্যাস, ব্যাংক খাতের তারল্য ঘাটতি ও ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা দূর করার মতো বড় সংস্কারগুলো এখনও পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র চাহিদা ব্যবস্থাপনা নয়, সরবরাহ ব্যবস্থার দিকেও সমর্থন দরকার ছিল, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পায়নি।
শেষে তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্ভাব্য ‘ভূমিকম্প’ পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন, যা বিনিয়োগ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।